রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

রেড্ রোডে রাত্রি শেষ

রাতের পাহাড় থেকে
খ’সে যাওয়া পাথরের মত
অন্ধকার ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে।
দু’হাতে সরিয়ে তাকে নির্বিকার নিরুত্তাপ মন
এগোলো।

দু’পাশের পায়ে-চলা পথে
এখনো ঘুমের স্রোত মরেনি,
প’ড়ে আছে কুন্ডলী পাকিয়ে
এখানে-ওখানে।
তারায় ভরা আকাশকে কাঁপিয়ে
শাদা কাফনের সঙ্কেত।

পদক্ষেপ জোরালো।
মনের সাথে নেই তার মিতালী,
অলস মন
ঘুমঘুম চোখের মত চাইছে
ছুঁয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে,
অথচ নেই অনাবশ্যক প্রখরতা-
আশ্চর্য!

খানিকটা হেঁটে গিয়ে
মার্কুইস লেন ছাড়িয়ে
কিড্ স্ট্রীট পেরিয়ে
             তারপর চৌরিঙ্গি।
গড়ের মাঠ দু’টুকরো
মাঝখানে আড়াআড়ি পীচের পথ
পেরিয়ে
    অতঃপর দীর্ঘ রেড্ রোড।

এখানে এই বিশাল পথ জড়িয়ে
অন্ধকার প’ড়ে আছে
দীর্ঘকায় সাপের মত।
আর আছে রেড্ রোডের দু’পাশে
তীক্ষ্ম চোখ জ্বালিয়ে
অন্ধকার শয়তানের পাহারা
                      তারা এখন মুমূর্ষু।

বাঁ-পাশের পাথরেগড়া মূর্তির গা বেয়ে
শেষরাতের শিশির এখনো ঝ’রছে
তার সাথে গ’লে গ’লে পড়ছে
অথবা পড়ছে ব’লে মনে হচ্ছে
এতদিনের যত্নে গড়া চেহারা-
তার ফাটলে বুঝি শেষ রাত্রির কান্না।

এদিকে আকাশে
কার শিকারী চোখের ছায়া জাগলো
কয়েকটি রেখা এসে লাগলো
দৈত্যকায় অজগরের পাঁজরে
তার দেহে লাগলো মৃত্যুর মোচড়।
এখন সাপের দেহ নড়বে
তারপর আকাশ থেকে ঝরবে
তীক্ষ্ণ তীর্যক বর্শা-
আর উড়বে অনেক দূরে
ছিন্ন ভিন্ন কালো সাপের দেহাংশ,
মিলিয়ে যাবে
রেড্ রোডের বুক থেকে,
এগিয়ে যাবে কেল্লার মাঠ পেরিয়ে
তারপর আরো এগোবে।
গঙ্গার গভীর জলে ঘুচবে কি তার লজ্জা!
অথবা ঘাটে বাঁধা অনেক দূরের জাহাজ,
যারা পার ক’রে দেয় পলাতক অন্ধকারকে
নিরাপত্তার পাল তুলে!

এরা সেই আপনি গড়া খেয়া নৌকোয় হয়ত-
পেরিয়ে যাবে গঙ্গা
মিলিয়ে যাবে পশ্চিম সীমান্তে,
নদীর জলে ঝলকে উঠবে মুক্তি,
বন্যা আসবে রেড্ রোডের প্রান্তে
কেননা
এদিকে আবার জাগবে নতুন সূর্য।

খানিকটা স্থির হ’য়ে সে থাকবে
তারপরে সে চম্কাবে
কাঁপবে
কেঁপে কেঁপে উঠে আসবে উপরে
ঝরাবে তার সোনা
ছড়াবে এই এখানে
এই রেড রোডের মরচে ধরা ঘাসে।
সকাল বেলার হাওয়ায় লাগবে জোর
পুরনো ধুলোরা এবার উড়বে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন