রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

যৌবনে জীবনে তুমি -আহসান হাবীব

তোমারই আভায় নিত্য নবরূপে তোমাকে দেখার
আকাংখার দীপ জ্বেলে হৃদয়ে
কৈশোর-যৌবনের সারাপথ হেঁটেছি,
জীবন আমার একার নয় জেনেছি
            এবং তোমাতেই সমর্পণ করেছি;
রেখেছি একাগ্র দৃষ্টির আলো পথে ফেলে
যে পথের ধুলি মেখেছি সর্বাঙ্গে
আর কারার নির্মম অন্ধকার উপেক্ষা করেছি
মুক্ত বুক সঙীনের মুখে পেতেছি নির্ভয়ে
শুধু এক অকৃত্রিম বাসনায়।
পলাশ বকুলে বিকশিত
সোঁদাল মাটির গন্ধে মর্মরিত
হলুদ ফুলের স্বচ্ছন্দ সহজ সমর্পণে
সজ্জিত চিত্রিত এক অকৃত্রিম প্রতিমার কামনায়
এ জীবন সমর্পিত ছিলো।

তোমাকে পেয়েছি অতঃপর অতি কাছে
বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে।
বহু রক্ত
    প্রিয়জন
        অতি প্রিয় জীবনের সব সুধা
        আর আনন্দের বিনিময়ে।
অথচ আশ্চর্য এই
জননীর সে মহিমা বিলিয়ে পুরনো সেই নাগরের পায়ে
নর্তকীর ভূমিকায় আজো তুমি
মগ্নচেতনার অন্ধকারে আবিষ্ট আত্মার বলি এক।

বলদর্পী  বণিকের মানদন্ড আনত।
তোমার সর্বাঙ্গে সে রেখে গেছে পীড়নের বহু ক্ষত
আরো জীবনের উদভ্রান্ত অশ্লীল বহু নিমিষের
ক্লান্ত মত্ততার জ্বালা।
সে জ্বালায় আজো তুমি জ্বলো!
তাই ঘরের সমস্ত মন দূরে বাইরে ছড়িয়ে ছড়িয়ে
নিয়ত কাঞ্চনমূল্যে বেলোয়ারী  সম্ভারে
তোমার ঘর ভরে।
হৃততৃপ্তি আত্মার আবেগে কী মত্ততা!
আর সেই মত্ততার স্রোতে
কে নিত্য নতুন ঢেউ রেখে যায় জানো না

এবং তোমারই আভায় নিত্য নবরূপে তোমাকে দেখার
আমার আজন্ম তৃষা কেন কাঁদে তুমি তা জানো না।

কে নিত্য হরণ করে তোমার শ্যামল দেহলাবণ্য,
তোমার কুন্তলের কৃষ্ণাভা,
তোমার আত্মার উজ্জ্বল ভোর
কে নিত্য রঙিন মেঘে ঢেকে দেয়
            তুমি তা জানো না।

তুমি তা জানো না!
আমি জানি।
জানি তাই আকাঙ্খার দীপে
আত্মার সুধায় জ্বলে একটি শিখা অমর্ত্য আশায়
এবং প্রত্যহ
শিউলি কি বকুল কিম্বা পদ্মকলি ভোরের পাখিরা
যখন ডানার ঘুম ঝেড়ে আসে নিমন্ত্রণে
আমিও তখন
    তাকাই
তাকিয়ে দেখি একটি অমর আত্মা!
যদিও বিষণ্ন আর ভীরু
তবু অপার বিশ্বাসে তখন মিনতি রাখি আমিও
এবং বলি:
দেখো দেখো তোমার আত্মার অন্ধকারে
কে যেন হীরের কুচি ছড়িয়ে ছড়িয়ে
ডাকে শোনো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন