রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

আজকের কবিতা - আহসান হাবীব

এখানে তোমার ছাউনি ফেলো না আজকে
     এটা বালুর চর:
চারদিকে এর কৌটিল্যের কন্টকময় বন ধূসর!
ঊর্ধ্বে আকাশ ম্লান মেঘের
নিম্নে অতল বন্যা এর-
বাস করে শত চানক্যশিশু শকুনির বহু বংশধর
এখানে তোমার ছাউনি ফেলো না এখানে বেঁধো না বিরাম ঘর।

পূবালী হাওয়ার নিশাস শুনছ?
             জ্বলবে না আজ গৃহের দীপ!
পায়ের তলায় শ্বাস ফেলে যায় হিংস্র কুটিল সরীসৃপ!
             বিংশ শতকী সভ্য দিন-
             শাণিত কৃপাণ শঙ্কাহীন
শস্যে হানবে শুনো ক্ষেতে তার হবে স্বার্থের হীন জরিপ
নীল রক্তের অভিশাপে ঘেরা জাগে নিপিষ্ট রিক্ত দ্বীপ।

তোমার আমার দিন ফুরায়েছে যুগটাই নাকি বৈপ্লবিক-
গানের পাখিরা নাম সই করে নীচে লিখে দেয় রাজনীতিক
            থাকতে কি চাও নির্বিরোধ?
           রক্তেই হবে সে ঋণ শোধ।
নীড় প্রলোভন নিরাপদ নয় বোমারু বিমান আকস্মিক
আরব্ধ গান এইখানে শেষ আজকে আহত সুরের পিক।

সপ্তসুরের উর্বশী তব আজি অথর্ব মৃত্তিকায়
কাঁদে মন্দার-গন্ধ-বিরহী বন্ধ্যাদিনের বন্দী বায়।
             ধুলায় ধূসর দীর্ঘ পথ
            হানছে কঠোর সুর শপথ
কল্প কামজ কুমারী কন্যা জ্বলে প্রচন্ড দিন শিখায়,
রমণীয় চাঁদ রাত্রির সুর মরেছে যাত্রা প্রান্তিকায়।

অদূর অতীত অখ্যাত দিনে যে সুর করেছে জন্মলাভ
সে জন্মপাপে আজকে জেগেছে আকুল আর্ত এই আবার
             হারানো সুরের কঙ্কালের
             দুঃসহ স্মৃতি তিক্ত জের
নির্বিকল্প কাল- প্রেক্ষায় আনে বিভ্রম বৈরিভাব,
অকাল-জন্ম ঋণ শোধ করে সৃজি সহস্র ঊর্ণনাভ।

আমাদের দিন মৃত্যু-তুহীন দীর্ঘায়ু হবে শ্যেনবিধান,
মৃৎ-পিপাসা ও শান্তিহরণ চিরদিন রবে বিদ্যমান।
          জঠরের জ্বালা চিরন্তন
          চির ক্লেদাক্ত এই জীবন
যুগ নিষাদের কপিশ নয়ন হানবে সেখানে দৃষ্টিবাণ।
আজকের দিনে এই ত কবিতা গানের পাখির এই ত গান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন